Monday, 11 July 2016

ডাক নাম তারছেরা

৪০তম সিগারেটটা শেষ করার পর রকি লাইটারটা হাতে নিলো আরেকটা সিগারেট ধরানোর জন্য। কিন্তু ধরাতে পারল না সিগারেটের অভাবে । সে ঘড়ি দেখলও রাতের ৩টা ৪৫ বাজছে ।  
মফিজের চায়ের দোকানটা খোলা থাকে সারারাত সে গিয়ে সিগারেট কিনে আনতে পারে কিন্তু তার যেতে ইচ্ছা করছে না । সে ছাদে লম্বা হয়ে শুয়ে আকাশ দেখছে এই আকাশের কোন শেষ নেই। 
সে ভাবছে ছাদ থেকে কি সে লাফ দিবে পরক্ষণেই তার মনে পরল তাদের বাড়িটা দোতলা , আর দোতলা থেকে লাফ দিলে কেও মরে না। এই পর্যন্ত রকি অনেকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে,কিন্তু
প্রতি চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ায় সে এখনও জীবিত।  এই বছরে তাকে ৩টা কলেজ পরিবর্তন করতে হয়েছে আসলে ওই ৩টা কলেজ থেকেই তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে । মারামারি করে ৩টা কলেজের ৫টা ছাত্রকে সে 
হাসপাতালে পাঠিয়েছে। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হওয়ার পরও তাকে টিসি দেওয়ার কারন এই ঘারতেরা, বদমেজাজি আর  উগ্র ব্যাবহার । প্রথম বার সে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে চলন্ত গাড়ির সামনে এসে কিন্তু গাড়ির 
চালক দক্ষ হওয়ায় সে দ্রুত ব্রেক লাগানোর কারণে রকি বেঁচে যায় । এভাবে দ্বিতীয়ও তৃতীয়ও বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেও সে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় । কথায় আছে রাখে আল্লাহ মারে কে ? তার ক্ষেত্রেও মনে হচ্ছে তাই ।
চতুর্থ দফায় সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে তাদের বাড়ির পেছনের দিকের খালে ঝাপ দিয়ে কিন্তু অলৈকীক ভাবে সে মধ্যা-কর্ষণ শক্তির নীতিকে অগ্রাজ্য করে পানিতে ভাসতে থাকে। সেবার বাড়ির কেয়ারটেকার 
রকিকে খালে ভাসতে দেখে পাড়ে তুলে নিয়ে আশে । এই হল তার চতুর্থ ব্যর্থতা । এর পর সে স্কুলের কেমেস্ট্রি ল্যাব থেকে পটাশিয়াম সাইয়ানাইড চুরি করে গিয়ে একজন বাধ্যগত ছাত্রের নজরে পরে । সে ছাত্র 
কেমেস্ট্রি টিচারকে বলে দেওয়ায় সেই বার পটাশিয়াম সাইয়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা তার গোল্লায় যায় । 
তার আত্মীয়স্বজন,স্কুলের সহপাঠী,শিক্ষক এমনকি তার বাবাও তাকে মানসিক রোগী মনে করতে থাকে । তার পেছনে তাকে নিয়ে সবাই সমালোচনা করতে থাকে। ক্লাসে তার নাম হয়ে যায় তারছেরা রকি । 
যে যত কষ্ট পাবে অপরের ততই আনন্দ অনুভুত হবে । আমাদের এই সমাজে এতাই তো স্বাভাবিক । কথা গুল ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তে রকির চোখের কোন থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরল । ফজরের আজান শোনা
যাচ্ছে সে উঠে দাঁড়ালো । অজু করে ফজরের নামাজ আদায় করল । এখন সে ঘুমাবে অনন্ত কালের জন্য সে ঘুমিয়ে পরবে । মনে মনে বললও আচ্ছা ১২ টা ঘুমের ওষুধ কি যথেষ্ট একটা শান্তির ঘুমের জন্য ?
দেখা যাক এই বলে ১২ টা ট্যাবলেট একসাথে সে মুখে দিয়ে গুট করে এক গ্লাস পানির সাথে নিমিশে গিলে ফেললও । এখন সে খুব কাছে অনন্ত কালের পথ যাত্রী হওয়ার জন্য কিন্তু এ কি তার ঘুম যে ভেঙ্গে যাচ্ছে । 
অত্যন্ত অনিচ্ছায় সে জাগ্রত হয়ে নিজেকে আবিস্কার করল হাসপাতালের বিছানায় । তার পাশে তার বাবা বসে আছে তাকে দেখে মনে হচ্ছে গত দু দিন ধরে সে ঘুমায়নি । ছেলেকে জেগে উঠতে দেখে রকির বাবার
চোখের কোনে অশ্রু জমা হলও । আনন্দ এবং বিষাদ মিশ্রিত অশ্রু যা শত চেষ্টায়ও আড়াল করা গেল না । এই প্রথম রকি তার বাবাকে দেখে মনে হলও এই মানুষটার তাকে ছাড়া আর কেও নেই সে মনে মনে বললও 
এইবার আমি বাঁচবও বাবা । কেও কখনো জিজ্ঞেস করে নি কেনও সে এমন করত,  কেও জিজ্ঞেস করলে হয়ত জানত 
তার মনে কত কষ্ট । খুব ছোট বয়সে রকির মা মারা যায় । এর পর থেকেই রকির বাবা তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় । বাবা মার স্নেহ ছাড়া বড় হতে থাকা রকি একদিন জানতে পারে ছোট বেলায় তার হার্টের
অপরেশন হয়েছিল । তার শরিরে যে হৃদপিণ্ডটি ধক ধক করছে সেটি তার মায়ের । তার কারনে তার মায়ের মৃত্যু সে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারে না । নিজেকে অপরাধি ভেবে তিলে তিলে তার করুন মন 
ভেবে বশেছিল সেও তার মার কাছে চলে যাবে । JUST KIDDING;এটা কোন বাংলা সিনেমা নয় । রকি আসলে ছেঁকা খেয়েছিল । এবং সেই দিন কোন অলৈকীক কারণে সে পানিতে ভাসছিল তা নয় । রকি ভাসছিল,
কারন প্রেমের মরারা জলে ডুবে না ।